সরলতা সম্বল

সরলতা (অক্টোবর ২০১২)

শাহরিয়ার পাভেল
  • ১১
সরলা। সহজ সরল গ্রাম্য মেয়ে। বয়স বেশি নয়। বেশি নয় ওর দেখার জগত্। প্রতি বছর ছোট মামা এসে ওর বাবাকে বলে,
-দুলাবাই, এইফেরে মেলা আম হইছে। কাডালও ধরছে প্রচুর। মা পাডাইছে সইল্যারে নিওনের লিগা।
নানা বাড়ি ছাড়া আরও এক জায়গায় ওর যাওয়া হয়। পাশের থানার ফকির বাড়ির কাছে ওর ফুঁফুর বিয়ে হয়েছে। প্রতি বছর একবার যায় ফুঁফুর বাড়ি। সপ্তাহখানেকের জন্য। তখন ফকির বাড়িতে বিশাল মেলা মিলে। দূর দুরান্ত থেকে অগণিত মানুষ আসে সেই মেলা উপলক্ষে। সরলা ভেবে কূল পায় না,
-এত্ত মানুষ! কই থাহে।
সরলার অন্যরকম অনুভূতি হয়। ভাল লাগে মানুষ দেখতে। আশ্চর্য হয় বেদেনীদের নৌকার বহর দেখে,
-মজাই!নিত্যি লুতন লুতন জায়গাত থাওন যায়।
আবার খটকা লাগে,
-কিন্তু এইডুন জায়গাত কেমতে থাহে বেগ্গলে?
রোমাঞ্চিত হয় যাত্রাদলের নট-নটী দেখে। ওদেরকে স্বপ্নের জগতের বাসিন্দা জ্ঞান করে,
-হেরাও মানুষ! কী রহমের মানুষ!
সরলার খুব ইচ্ছে হয় একটা রেডিও কেনার জন্য। কিন্তু, "এত্ত দাম!"। কিনতে চাওয়ার সাহস হয় না।
গ্রামের স্কুলে যেত সরলা। তৃতীয় শ্রেণী শেষ করতে পারে না। এরই মধ্যে শিখে ফেলে ঘর-গৃহস্থালীর নানান কাজ। মা'কে সাহায্য করা পড়ার চেয়ে অনেক জরুরী!
ছোট্ট এই পৃথিবীতে সরলার জগতটি আরও ছোট। গাঢ় কুয়াশায় মাথা নষ্ট হয়ে যায় সরলার,
-আমের বৈলগুলান আর থাকত না।
আবার অনেক আম হলেও চিন্তা সরলার। পাশের বাড়ির সমবয়সী লুতফাকে বলে,
-বাবায় কয়, আমে আনে বান। এইবার নাজানি কত বন্যা অয়রে!
লুতফা সরলার সাথে খুব সহজেই ভাব ধরতে পারে। কারন ওর নানাবাড়ি থানা সদরে। সারা বছর চলতে থাকে থানার রকমারি গল্প। কারনে অকারনে লুতফা এই গল্পগুলো শুনায় সরলাকে। গল্প শুনতে শুনতে সরলার আফসোস হয়,
-ইস্! আমার নানা বাড়িও যদি ওইহানে অইত।
-তোর বাজানরে জিগা। হেয় রাজি হইলে তোরে নিয়া জামুনে।
সরলার সে সাহস নেই। যাওয়া আর হয় না। সরলার মনে থানা সদর নিয়ে বিস্তর কল্পনা ডানা মেলে। মা'কে বলে,
-জানস মা, থানায় নাহি নিত্যি বাজার বয়। মানুষ নাহি ফকির বাড়ির মেলার লাহান হগ্গল সময় ধইরা থাহে। গম গম করে। রাইতেরকালে বিজলী বাত্তিও জইলা উডে। সিনেমা দেহন যায়। বিরাট একহান হল আছে।
এবার নানাবাড়ি থেকে দৈনিক পত্রিকার কয়েকটি পাতা নিয়ে আসে লুতফা। সেগুলো জুড়ে চলচিত্রের নায়ক-নায়িকাদের রং-বেরঙের বড় বড় ছবি। অনেক চেয়েচিন্তে একটা পাতা জুটে সরলার। ঘরের ভাঙ্গা বেড়ায় সেটিয়ে রাখে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে পাতাটির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে। আপন কল্পনায় ডুব দিয়ে বিস্মিত হয়। খুব ভাল লাগে। ক্ষণে ক্ষণে মুখে হাসি ফুটে উঠে।
-আছ্ছা, হেরা কী যাত্রাদলের মাইনসেগু লাহান?
জানাশুনা জগতের সাথে খানিকটা মিলিয়ে দেখতে চায় সরলা।
-আরেহ, কই চকির তলা আর কই আগরতলা। কিয়ের লগে কিয়ের কথা কউ, সরলা।
তাচ্ছিল্যের সাথে জবাব দেয় রইস। গায়ে রেশমী শার্ট আর রঙিন প্রিন্টের লুঙ্গি পড়া। লুতফার মামাতো ভাই। কালরাতে ফুঁফুর বাড়িতে এসেছে। সকাল সকাল সরলাদের বাড়িতে নিয়ে আসে লুতফা। ছোট থাকতে বছরে একবার করে আসত। মাঝে মধ্যপ্রচ্যে চাকুরি করতে গেলে আর তেমন একটা আসা হয়নি। লুতফার ঠিক একযুগ বড়। রইস এবার প্রথম দেখায় চিনতে পারেনি সরলাকে। লুতফা বিরক্তি নিয়ে বলে,
-রসুভাই, তুমি হেরে চেনোনা! বিদেশ গিয়া তোমার বুজি ডং বারছে। ও আমাগো সরলা।
-সরলা!
হা করে চেহারারদিকে তাকিয়ে থাকে কতক্ষণ। তারপর বলে,
-মাশাল্লাহ গাও গতরে মেলা বড় অইয়াগেছে। তয় না চিনলে আমার দোষ, ক!
সরলা খানিকটা লজ্জা পায়। চোখ নিচে নামায়। তখন সরলার মা দুইহাতে একটা গরম ভাতের হাড়ি নিয়ে ঘরে ঢুকে। সরলার মা'কে রইস লুতফার মতই চাচী ডাকে।
-চাচী আপনার সইলডা অহন কেমন?
-ভালা আছি বাবা। তোমারেতো চেননই জায়না। মেলাদিন বিদেশ করলা বুজি। মোডা অইয়াগেছ। গালগুলান বইরাগেছে। তোমার ফুঁপুরথন হুনলাম আরনাহি জাইবানা।
-হ! ঠিহই হুনছেন। আর জামুনা।
-তা অহন কী করবা?
-গতবচর আইয়াইতো বড় শহরে থাহি। বাড়িত তেমন আওয়া পড়েনা। আমি ওইহানে ফিলিম বানাইবার কাম করি।
শুনেই সরলা বেশ কৌতুহলি হয়। ওর চোখে মুখে সেটা ফুটে উঠে। হাজারো জিজ্ঞাসা ওর তখন। রইসকে একটার পর একটা প্রশ্ন করে যায়। ওর মা বিরক্ত হয়,
-থামতো দিহি। হেই কোনবেলাথন কি ছাতামাতা কইয়া জাইতাছছ।
-না না চাচী, ওরে কইতে দেন। আমার এইগুলান লইয়া গপ্প করতে বালাই লাগে।
তত্ক্ষণাত বলে উঠে রইস।
সরলাকে প্রথম দেখাতেই রইসের বেশ মনে ধরে যায়। সরলার সাথে কথা বলার এই সুযোগ সে কোনমতেই হাতছাড়া করতে রাজিনা। তাই ইচ্ছেমত বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলে যায়। সরলার বিস্ময়ও আর ধরেনা। চোখে মুখে তা অবিরত বিস্ফোরিত হতে থাকে। মাঝে গল্প থামিয়ে লুতফা বলে,
-অনেক অইছে। অহন চলো রসুবাই। মায় খাইবার ডাহে।
-আমাগো লগে চাইরডা ডাইল বাত যা আছে খাইয়া যাও। ফুপুর বাড়িততো খাইবাই।
-নাহ, চাচী। আইজ কী আর শেষ নাহি। ফুপুর শরিল যা। আমারইতো খুজকবর লওন লাগবো। ফুপুর পোলাগুলানতো মানুষ অইল না। আকাইম্মা। আমি অহন পরাই পরাই আমু। তহন খামুনি।
যাবার সময় রইস নীচু স্বরে বলে,
-এতদিন ক্যান আইলাম না।
-কিছু কইলা রসুবাই।
লুতফা জিজ্ঞেস করে।
রইস এরপর থেকে প্রায় প্রতি মাসে একবার করে আসতে থাকে। সরলাকে বড় শহরের গল্প শুনায়। বড় বড় দালান, মটরগাড়ি, পার্ক কতগল্প। সরলার সরলতায় স্বপ্ন আকাশ ছুঁয়ে যায়,
-ওইহানে যেরা থাহে হেরা কত্তবড় বাইগ্যবান।
-তোমার সাদ অয়?
-অইলেই কী হেইডা পুরন অইব?
-হেইরকম কইরা চাইতে অইব।
বলতে বলতে হাত ধরে ফেলে রইস। বড় শহর আর চলচিত্রের গল্প শুনতে শুনতে সরলার মন আগে থেকেই বিগলিত। তবু ইতস্তত করে সরলা। যদিও খুব জোড়ে বাঁধা দিতে পারেনা। রইস যেন আরও সাহস পায়। বলে,
-তুমি চাইলে আমি তোমারে বড় শহরে নিয়া জামু।
-কেমনে?
গলা কাঁপছে সরলার। রইস টের পায় সরলার হাতও কাঁপছে।
-আমি তোমারে বিয়া করমু। বিয়া কইরা নিয়া জামু্। নিজের চোক্কে দেকবা বড় শহর কত সৌন্দর্য।
-কেমনে? বাবায় রাজি অইব? আপনের বাবা?
-না অইলে আমরা পালায় গিয়া বিয়া করমু। আমগো গেরামে আহন লাগবো না। আমরা শহরে চইল্যা জামু।
-অত সুজা?
-সাহস আনো সরলা। আমার উপরে বরসা রাহো।
সরলার মনে সাহস এসেছিল। অসীম সাহস। রইস বুকের মধ্যে টেনে নিয়েছিল। সেখানে যে আগুন জ্বলেছিল তার আঁচ লেগেছিল সরলার অবুঝ সরল মনে। সেই আঁচ থেকে আগুন জ্বলেছিল সরলার বুকেও। মজাপুকুর পাড় জুড়ে বড় ছোট গাছের নিবিড় জঙ্গলে হারিয়ে গিয়েছিল ওরা। সম্বিত ফিরে পেলে বোবা জল গড়িয়ে পড়ে সরলার দু'চোখ বেয়ে। রইস ফের সাহস দেবার চেষ্টা করে,
-বয় পাইতাছ ক্যান। আমার উপরে বরসা রাহো।
আচমকা রইসের বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে সরলা,
-এইডা কি করলেন রসুবাই।
-আমার উপরে বরসা রাহো, সরলা। আমি সামনেফের আইয়া তোমারে শহরে নিয়া জামু্।
-আমি পালাইতে পারুম না। আমার বাজান কষ্ট পাইব।
-আর তোমারে না পাইলে আমি যে কষ্ট পামু, হেইডার কী অইব।
-আপনে কবে আইবেন? শহরে এত্ত মাইয়্যার মাঝে আমারে ঠিহই বুইল্যা জাইবেন।
-কি যে কও। আমি তোমার লিগা বড় চাইয়্যা একডা বাড়ি টিক কইরা আহি। হেরপর লইয়া জামু।
রইস চলে যাবার পর দুই মাস চলে গেল। কোন খোঁজ-খবর নেই। অথচ বাড়িতে সরলা ধরা পড়ে যায়। শাররীক অবস্থা দেখে ওর মার বুঝতে অসুবিধা হয় না,
-ক, তোর এত্ত বড় খতি কেডা করল?
ধীরে ধীরে সব জানাজানি হয়ে যায়। গ্রাম্য শালিস হয়। রইস থানা সদরের ছেলে হওয়ায়, ওদের পরিবারের সাথে পারে না। তথাপি লুতফার মা'র কারনে রইসের বাবা সরলাকে পুত্রবধুর স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়। কিন্ত বাধ সাধে রইস। রইস দাবি করে সরলার বাবাকে যৌতুক দিতে হবে। বড় শহরে ব্যবসার কাজে লাগাবার জন্য নগদ টাকা দরকার।
সরলার বাবার শেষ সম্বল দুইবিঘা জমি। সেই জমি বিক্রি করে যা পাওয়া যায় তাই দিয়ে দেয় রইসকে। অবশেষে রইস বিয়ে করে সরলাকে। কিন্তু মনক্ষুন্ন হয় প্রত্যাশা মাফিক টাকা না পাওয়ায়। সরলাকে তুলে নেয়না। বলে,
-সবে নুতন একডা বেবসা হাতে নিছি। অহন খরচা বাড়াইতে পারুম না। বেবসার একডা গতি করি। হেরপর শহরে নিয়া জামু।
সরলা আবারও সরল বিশ্বাসে তাতেই আশ্বস্থ হয়। কিছুদিন পর সরলার একটা মেয়ে সন্তান হয়। এরমধ্যে বার দুই রইস এসে দেখে যায় সরলাকে। বাচ্চা হয়ে গেলে রইস অযুহাত পায়,
-তুমি এলহা এলহা মাইয়্যা পালতে পারবা না। একডু বড় অওক, তহন লইয়া জামু।
-হেইলে আপনেগো বাড়িত লইয়া চলেন।
-কি কও! আমি না তাকলে তোমার অযতন হইব। হেরচেয়ে তুমি এহানেই থাহো।
মেয়ের বয়স এক হওয়ার আগ পর্যন্ত রইস এক দুই মাস পরপর একবার করে দেখে যেত। কয়েক রাত থেকে আবার চলে যেত। কিন্তু আরও ছয়মাস কেটে যাবার পর রইসের আর কোন খোঁজ থাকেনা। সরলার বাবা আবার সরণাপন্ন হয় লুতফার মা'র,
-ভাবীসাব, আপনে একডু বেবসতা কইরা দেন। মাইয়্যাডারে হওরবাড়ি পাডাইতে পারলে নিচ্চিন্ত হইতাম।
লুতফার মা'র কারনেই আবার সরলা শ্বশুর বাড়ি যেতে পারে। কিন্তু সেখানেও রইসের কোন খোঁজ নেই। মাসের পর মাস যেতে থাকে। শ্বশুর বাড়িতে নানা রকম তীর্যক কথায় ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকে সরলা। রইসের এক চাচাতভাই মাখন এরমধ্যে ব্যতিক্রম। সরলা অনুভব করতে পারে। ওই-ই একদিন খবর আনে,
-ভাবি, বাইজানের খুজ পাওনগেছে। আমার বন্ধুর চাচা হেরে দেকতে পাইছে। হেয় টিকানাও বাইর করছে।
-আমারে নিয়া যাইতে পারবি?
-আমি কেমতে নিমু। আমি কী জিবনে গেছি নাহি। তয় চাচারে কইয়া দেকতে পারি।
-একডু দেকনা বাই।
চাচা সরলাকে নিয়ে যেতে রাজি হয়। একদিন এক অন্ধকার রাতে সবার অগোচরে সরলা বের হয়। কোলে দুই বছর বয়সী বাচ্চা। সাথে বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া কিছু স্বর্ণালঙ্কার আর নগদ টাকা। মাখনকে অনেক কষ্টে সাথে যেতে রাজি করায় সরলা। রইসের সমবয়সী হবে লোকটা। তার সাথে প্রথমবার শহরে পা রাখে। রইসের মুখে শুনে শুনে সরলার মনে স্বপ্নজগত আগে থেকেই তৈরি হয়েছিল। এখন নিজের চোখে দেখে তার সাথে মিলিয়ে নেবার কথা ছিল। কিন্তু সেদিকে সরলার এখন মন নেই। চাচা বলে,
-তোমগো লগে টাহা পয়সা কেমন আছে? এহানে পা ফেলতে টাহা লাহে।
সরলা নগদ টাকাগুলো চাচাকে বের করে দেয়। চাচা আবার বলে,
-একয়ডা টাহা দিয়া কী অইব। আমি নিজেও তো অত বড়লোক না। মাহনযে কইছিল তোমার লগে সোনা আছে ওইডি দাও।
সরলা স্বর্ণালঙ্কার বের করে দেয়। চাচা ওগুলো হাতে নিয়ে বলে,
-এগুলানরে অহন বেইচ্চা টাহা করন লাগব। তুমরা এহানে থাহো। আমি দেহি বেইচ্চা আহি।
চাচা যাবার পর ওদের অপেক্ষা আর শেষ হয় না। দিন গড়িয়ে রাত নেমে আসে। সরলা মাখনকে বলে,
-চাচার কী কোন বিহদ-আফদ অইলনি। কী করি কত বাই।
মাখন অস্থির হয়ে পায়চারি করতে থাকে। বাড়িতে না বলে পালিয়ে এসেছে। রইসকে ছাড়া বাড়ি ফিরলে গ্রামে বদনাম রটে যাবে। ভাবিকে নিয়ে পালিয়ে আসার বদনাম। তারউপর দু'জনের কারো কাছে এখন আর কোন টাকাও নেই। সারাদিন না খাওয়া শরীর, প্রচন্ড দুর্বল লাগে।
রাত অনেক হলেও রাস্তা-ঘাট বেশ জম-জমাট। গাড়ির হর্ণের শব্দে মাথা ধরে যায় সরলার। আর কোন উপায় না পেয়ে, কোলের বাচ্চা আর মাখনকে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়। বলতে থাকে,
-বাই আমাগো কিছু সাহাইয্য কইরবেন। আমরা অনেক দূর গ্রাম থাইকা আইছি জামাইর খোঁজে। কিন্তু টাহা পয়সা সব হারাইয়া আমাগো গেরামে জাওনের পত নাই। হারাদিন কোন দানাপানিও পড়ে নাই।
প্রথম যাকে এই কথাগুলো বলল সেই সরলাকে বেশ কিছু টাকা দিয়ে দিল। ওটা দিয়ে ওদের ভরপেট খাবার কেনার পরও বেশ কিছু টাকা রয়ে যাবে। এই দেখে মাখনের লোভ হয়,
-বাবি, বালাইতো। আগে হুনতাম। বাইজান কইত শওরে নাহি টাহা উড়ে। অহনতো তাই দেকতাছি। এইরহম আর দশজন যদি টাহা দেয় তাইলেতো মেলা টাহা।
সেইরাতে ওদের কল্পনাতীত টাকার আমদানি হলো। ফলে ওদের মধ্যে আরো টাকার নেশা পেয়ে বসে। মাখনের চোখ-মুখ লোভে ঝলসে যায়,
-কাইল বিয়ান বেলা থাইকাই রাস্তায় নাইমা পরুম।
ট্রেনস্টেশনে অনেকমানুষকে শুয়ে থাকতে দেখে ওরাও সেখানে শুয়ে পড়ে। সরলার ঘুম আসে না। বাচ্চাকে কোলে ঘুম পাড়িয়ে স্টেশনের এক পিলারে হেলান দিয়ে বসে থাকে। সরলার মনে হতে থাকে,
"আমগো গাও-গেরামে মাইনসের তৈয়ার করা বড় বড় দালান নাই। পাহা পাহা রাসতা, মটরের গাড়ি নাই। তয় আমগো আছে গাঙ, পাহি, গাছ-পালা। বিষ্টি অইলে মাডির গন্দ আহে। আমগো গতরেও মাডির গন্দ লাইগ্গা থাহে। তাই আমগো গেরামের মানুষগুলান মাটির লাহান। গাছের লাহান সহজ। বইয়া যাওয়া গাঙের লাহান সরল।"
সরলতার বোধোদয় হয়,
-মাইনশ্যের সরলতারে পুনজি কইরা টাহা কামানোর মইধ্যে বালা কিছু নাই। আমাগোর সরলতাযে গাঙের পানিতে মিইশ্যা গেল।
সাথে সাথে মাখনকে ডেকে তুলে। মাখন ধড়ফড় করে উঠে যায়। সরলতা স্বাভাবিক গলায় বলে চলে,
-চল মাহন আমরা বাড়িত ফিইরা যাই। এইরহম লোক ঠকাইয়া সরলতা ভাইঙ্গা জান বাচানোর দরকার নাই।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক বাস্তব জীবন থেকে উঠে আসা সরল গল্প...আর সুযোগ সন্ধানীদের মুখোশ ভেসে উটেছে...খুব ভালো লাগলো গল্পটা...
এশরার লতিফ বেশ লাগলো আপনার সরলতার গল্পটি। লেখককে শুভেচ্ছা।
পুতলি গল্পটা খুবই অসাধারণ আর কঠিন হয়েছে......অনেক অনেক সাফল্য কামনা করি.....
অনেক ধন্যবাদ গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
প্রিয়ম খুব খুব দারুন লিখেছেন ভাই ,ভালো লাগলো অনেক |
প্রবল উত্সাহ বোধ করছি। অনেক ধন্যবাদ!
আহমেদ সাবের গ্রামের সাদাসিধা সরলাদের সরলতার গল্প। "-চল মাহন আমরা বাড়িত ফিইরা যাই। এইরহম লোক ঠকাইয়া সরলতা ভাইঙ্গা জান বাচানোর দরকার নাই। " - সবাই কি আর ফিরে যেতে পারে? ভাল লাগল গলটা।
সবাই পারে না, সরলতাকে যারা সম্বল ভাবে তারা পারে। আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমি খুব উত্সাহ বোধ করছি।
সাবিরা রিমা এইরহম লোক ঠকাইয়া সরলতা ভাইঙ্গা জান বাচানোর দরকার নাই। ইশ এই বোধটা যদি আমাদের সবার থাকতো....ভালো লেগেছে আপনার গল্প কথন...
আমারও বেশ ভাল লাগল আপনার মন্তব্য পড়ে। ভাল থাকবেন।
রাজন নন্দী সহজ কথা যায় না বলা সহজে। আপনি সরলতার ভেতর দিয়ে আমাদের নাগরিক ধূর্ততাকে মূর্ত করেছেন। সাধু।
আপনার মন্তব্য আমাকে যারপর নাই অনুপ্রানিত করল। অনেক ধন্যবাদ।
ওবাইদুল হক রইস দাবি করে সরলার বাবাকে যৌতুক দিতে হবে। বড় শহরে ব্যবসার কাজে লাগাবার জন্য নগদ টাকা দরকার। সরলার বাবার শেষ সম্বল দুইবিঘা জমি। সেই জমি বিক্রি করে যা পাওয়া যায় তাই দিয়ে দেয় রইসকে। অবশেষে রইস বিয়ে করে সরলাকে। কিন্তু মনক্ষুন্ন হয় প্রত্যাশা মাফিক টাকা না পাওয়ায়। সরলাকে তুলে নেয়না । এভােব কত অবলা নারীর জীবন ন।ট হয়ে যায় । আর ধনীরা পাশে থেকে মুখ লুকিয়ে হাসে । আসরেই ভাই আপনার বাস্তব লেখাকে অন্তর দিয়ে শ্রদ্ধা করলাম সেরাটা না দিয়ে পারলামনা । শুবকামনা ।
অনেক ধন্যবাদ obaidul hoque কষ্ট করে পড়ে মন্তব্য করার জন্য। প্রবল উত্সাহ বোধ করছি। ভাল থাকবেন।

১৩ সেপ্টেম্বর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪